বৃহস্পতিবার ৩০ অক্টোবর ২০২৫ - ২১:২৩
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা জাগ্রত রাখার উপায় কী?

হাওজা নিউজ এজেন্সিকে সাক্ষাত্কার দিয়েছেন হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মাওলানা হাসিব মির্জা (পশ্চিম বঙ্গ ভারত)

বিশেষ সাক্ষাতকার:

হাওজা নিউজ এজেন্সি:


আসসালামু আলাইকুম। আজকের আলোচনার বিষয়— “ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা জাগ্রত রাখার উপায় কী?”
আমাদের সমাজে আজ একদিকে আধুনিকতা ও প্রযুক্তির বিস্তার, অন্যদিকে তরুণদের মধ্যে ধর্মীয় অনাগ্রহের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের সময়কালে কীভাবে আমরা আমাদের সন্তানদের ধর্মীয় ও নৈতিক চেতনায় গড়ে তুলতে পারি— সে নিয়েই আজ কথা বলব প্রখ্যাত আলেম, হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মাওলানা হাসিব মির্জা সাহেবের সঙ্গে।
মাওলানা সাহেব, আপনাকে স্বাগত জানাই।

মাওলানা সাহেব, বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা কমে যাওয়ার কারণ আপনি কীভাবে দেখছেন?

মাওলানা হাসিব মির্জা:
ওয়ালাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। মূলত সমাজ ও পরিবারের গঠন এখন আগের মতো নেই। আগে সন্তানরা বাবা-মায়ের কাছ থেকে ধর্মীয় শিক্ষা পেত, এখন বাবা-মা নিজেরাই ব্যস্ত জীবনে আবদ্ধ। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তির আসক্তি। শিশুদের হাতে ছোট বয়সেই মোবাইল, গেমস, সোশ্যাল মিডিয়া চলে যাচ্ছে— ফলে ধর্মীয় পরিবেশ থেকে তারা দূরে সরে যাচ্ছে।

আপনার মতে পরিবার কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে?

মাওলানা হাসিব মির্জা:
পরিবারই হলো ধর্মীয় চেতনার প্রথম বিদ্যালয়। শিশুরা কথা শোনার আগে দেখে। বাবা-মা যদি নিজেরা নামাজ আদায় করেন, দোয়া পড়েন, সততা বজায় রাখেন— সন্তান সেটিই শিখবে। ধর্ম শেখানো মানে শুধু উপদেশ নয়; জীবনের প্রতিটি আচরণে ধর্মের সৌন্দর্য দেখানো।

শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত রাখার কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন?

মাওলানা হাসিব মির্জা:
আমরা যদি নৈতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষা একসঙ্গে উপস্থাপন করি, সেটিই সবচেয়ে ফলপ্রসূ হবে। কেবল ধর্মীয় পাঠ্যবই নয়— প্রতিটি বিষয়ের মধ্যেও মূল্যবোধের শিক্ষা থাকা উচিত। শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে, সততা, সহনশীলতা, ন্যায়পরায়ণতা— এসবই ধর্মের শিক্ষা।

প্রযুক্তি ও আধুনিক মিডিয়ার যুগে ধর্মীয় চেতনা জাগানো কতটা সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?

মাওলানা হাসিব মির্জা:
খুবই সম্ভব— যদি আমরা প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করি। ধর্মবিরোধী কনটেন্ট যেমন সহজলভ্য, তেমনি ধর্মীয় জ্ঞানও ডিজিটাল মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। তরুণদের ভাষায়, আধুনিক স্টাইলে, যুক্তিপূর্ণভাবে যদি ধর্মের সৌন্দর্য তুলে ধরা যায়, তাহলে তারা আগ্রহী হবে।

এই প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা আপনি কীভাবে দেখছেন?

মাওলানা হাসিব মির্জা:
ধর্মীয় নেতাদের দায়িত্ব হলো মানুষকে ভয়ের নয়, ভালোবাসার মাধ্যমে ধর্মের দিকে আহ্বান করা। আজকের প্রজন্ম প্রশ্ন করে, যুক্তি চায়। তাই ধর্মীয় আলোচনায় তাদের মানসিকতা বুঝে কথা বলতে হবে। ইসলাম কখনো কঠোরতার নয়— এটি মানবতা, সহনশীলতা ও জ্ঞানের ধর্ম। এই মর্মবাণী পৌঁছে দিতে পারলে তরুণদের হৃদয়ে ধর্মের প্রতি টান তৈরি হবে।

তাহলে সার্বিকভাবে বললে— ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা জাগ্রত রাখার মূল উপায় কী?

মাওলানা হাসিব মির্জা:
আমাদের তিনটি স্তরে কাজ করতে হবে— পরিবার, শিক্ষা ও সমাজ। ধর্মকে ভয় নয়, ভালোবাসা হিসেবে শেখাতে হবে। সন্তানদের জানাতে হবে যে ধর্ম মানে শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ, মানবতা ও শান্তি। আমরা যদি নিজেরাই উদাহরণ হতে পারি, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম স্বাভাবিকভাবেই ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হবে।

ধন্যবাদ, মাওলানা সাহেব, এত সুন্দর ও চিন্তাশীল বক্তব্যের জন্য।
আপনার কথায় আমরা বুঝতে পারলাম— ধর্মের আসল শক্তি হলো ভালোবাসা, আচরণ ও উদাহরণ।
যদি পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজ একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শুধু জ্ঞানেই নয়, নৈতিকতাতেও হবে আলোকিত।

মাওলানা হাসিব মির্জা:
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই আলোর পথে পরিচালিত করুন।


আমিন। ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: হাসান রেজা

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha